রমজানের খাবার টিপসঃ সুস্থতায় সেহরি ইফতারে কি খাবেন | Ramadan Foods
শুরু হয়ে গেলো পবিত্র মাহে রমজান। রোজার মধ্যে ইফতার ও সেহেরীতে বেশি বেশি পানি পান করা খুবই জরুরী (Ramadan Foods)। সারাদিন যেহেতু আমরা পানি পান করা থেকে বিরত থাকি, দেহের পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতার ও সেহেরীতে পর্যাপ্ত পানি এবং পানীয় খাদ্যদ্রব্য খাওয়া প্রয়োজন। এতে গরমে রোজা রাখতে সহজ হয় এবং হজমে সুবিধা হয়। আমরা অনেকেই ইতিমধ্যে নিয়েছি রমজানের প্রস্তুতি। কিন্তু এবারের রমজান বেশ অন্যরকম। রোজা রাখার জন্য শরীরকে সুস্থ রাখার এমনিতেও কোন বিকল্প নেই। না খেয়ে কাটানো সময়ে শরীর তার সংরক্ষণকৃত কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট থেকে এনার্জি নিয়ে কাজ সঞ্চালন করে থাকে। এক্ষেত্রে শক্তি সঞ্চালনের জন্য সঠিক খাদ্যভাসের পাশাপাশি আরও আনুষাঙ্গিক কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। তাই জানা দরকার রমজান মাসে সুস্থ থাকার কিছু টিপস।
ইফতারে যা যা খাওয়া উচিত
রমজান মাসে সুস্থ্য থাকতে গড়ে তুলুন স্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস
ইফাতার এবং সেহরিতে সবরকম খাদ্য উপাদান রাখা জরুরী। তবেই সাচ্ছন্দ্যে রোজা পালন সম্ভব। প্রায়ই আমরা ইফতারের পর যেকোনো খাবারে না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ি।
– ইফতারের খাদ্য তালিকায় সেসব খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরের স্বাস্থ্য সুস্থ ও সতেজ রাখে যেমন- পানি, জুস, শরবত, খেজুর, কলা, পেঁপে, শশা/খিরা, কাঁচা ছোলা, ভিজা চিড়া, খিচুরি, পায়েস, মিষ্টি, হালিম, কাঁচা ফলমূল ইত্যাদি।
– রোজার সময় প্রতিদিনের খাবারের তালিকা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, তবে পানি বেশি করে খাওয়া উচিত।
– রাতে ও সেহরির সময় বেশি করে পানি, ভাত, ডাল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম একটু ঝোল করে খেতে পারেন তবে বেশী মসলা ও তেল কসানো তরকারি খাওয়া উচিত না।
– ইফতারে স্যুপ জাতীয় খাবার খাওয়া ভাল।
– শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ভাজাপোড়া, শুকনো খাবার ও তৈলাক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো তবে খেলেও কম খাওয়া উচিত। কারণ, এ জাতীয় খাবার বুকে জ্বালাপোড়া, বদহজম ও গ্যাসের সৃষ্টি করে।
– রোজা রেখে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে দুরে থাকুন। বেশি পরিশ্রমের ফলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
– সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে পরিমাণমত খাবেন।
– রোজায় যেসব খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয় ঐসব খাবার না খাওয়াই ভাল।
– শুধুমাত্র দাঁতের সুস্থতার জন্য নয়, আপনার শ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে সহ-কর্মিদের বাঁচাতেও সেহরীর পর দাঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং করুন। অত্যধিক শর্করাযুক্ত স্ন্যাক ও পানীয়ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া আরো যা করতে পারেন-
– ইফতারে খেজুর তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং পানি দেহকে রিহাইড্রেট করে।
– পর্যাপ্ত ঘুমের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে।
– সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে পানি কম খাওয়ার কারনে হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাটিন্য ও আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়, একারনে ইফতারের সময় হতে সেহরীর সময় পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে পানি খাবেন।
– রোজায় ধূমপান থেকে দূরে থাকুন এবং ধূমপান না করা স্বাস্থের জন্য ভাল।
– চা-কফি পান না করাই মঙ্গল। এতে করে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। চা-কফির স্থলে বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা পানীয় পান করুন।
– যারা ডায়েট করে থাকেন রোজায় খাবারের পরিমান সীমিত বলে তাদের ডায়েট করার প্রয়োজন নেই।
– যাদের ডায়েবেটিস আছে তারা সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করবেন। ভুল এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
– প্রতিদিন যারা ব্যায়াম করে থাকেন তারা রোজায় ব্যায়ামের মাত্রা কিছুটা কমিয়ে সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের কিছুক্ষণ পর আধা ঘণ্টা করতে পারেন। রাতে বা সেহরীর সময় নিয়মিত হাটাচলা ভাল।
– যারা বিভিন্ন রোগের জন্য ঔষধ সেবন করেন তারা রোজা শুরুর পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ইফতার ও সেহরীর সময় ঔষধ সেবন করতে পারেন।
অনুসরণ করুন নবীজির একতৃতীয়াংশের সুবর্ণ নিয়ম
রমজানে মাসে এটা অবশ্যই পালনীয়। খাবারের একতৃতীয়াংশই আমাদের খাওয়া উচিত। এই পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এরপরে সমপরিমাণ জায়গা আমাদের পাকস্থলীর ফাঁকা রাখা প্রয়োজন। এতে আমাদের পাকস্থলী সুস্থ থাকে।
তারাবীর নামাজ আদায় করুন
সব থেকে ভালো ব্যায়াম হলো নামাজ। নামাজের মাধ্যমে সব কিছু অর্জন করা যায়। একটা স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্যও।
সেহরির খাবার যেমন হবে
দিন এখন অনেক বড় হয়েছে তাই দীর্ঘক্ষণ রাখতে হচ্ছে রোজা। আর দিনের শুরু হয় সেহরি দিয়ে। সেহরির খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ প্রোটিন সমৃদ্ধ, আঁশযুক্ত, সুষম, দ্রুত হজম হয়ে যায় এমন খাবার । সেই সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়া, যাতে করে সারা দিন আপনি হাইড্রেটেড থাকতে পারেন। ভাবছেন আঁশযুক্ত খাবার কোন গুলো? আঁশযুক্ত খাবার হলো গম বা গম থেকে তৈরি খাবার যেমন ধরুন, রুটি, শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি। আপনি চাইলে সুষম খাবারও রাখতে পারেন। যেমন ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত মাংস বা মাছ, ভাত বা রুটি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি।
সেহরিতে যে খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিৎ
সেহরিতে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার, মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেকেই আছেন যারা সারাদিন রোজা রেখে ধূমপান থেকে বিরত থাকছেন যার ফলে ইফতারের পর সেহরি অব্দি অতিরিক্ত ধূমপান করে থাকেন। এই রকম ধূমপানের প্রবণতা রোজা আসার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। রোজার সময় ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। রমজানেই ধুমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ধুমপান হারাম, কারণ যে জিনিস বেশি খেলে মানষিক বকৃতি ঘটে তা কমও হারাম যেমন তামাক।
যে সমস্ত বিষয়ে নিতে হবে সাবধানতা
স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোক সিয়াম সাধনা। নানা বিধি নিষেধ আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হচ্ছে রোজা। আমাদের ভাবতে হবে কোভিডকে মাথায় রেখে কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রোজা পালন করা সম্ভব।
নিজের ঘর পরিষ্কার রাখুন
আমাদের ঘরের এমন কিছু জিনিস বা জায়গা আছে যেগুলো, সারাদিনে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেগুলোর প্রতি আপনাকে মনোযোগী হতে হবে। যেমন, টেবিল, ডাইনিং চেয়ার, ইলেকট্রিক সুইচ, টয়লেট, ডোর নবস, হ্যান্ডেল এবং রিমোট। সারা দিনে এই জিনিসগুলো ঘরের সবাই বার বার স্পর্শ করে থাকে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। খুবই ভালো ফলাফল হয় যদি দিনে দু-একবার এগুলো পরিষ্কার করা যেত। এগুলো পরিষ্কার করার জন্য যেকোন দোকান থেকে অ্যালকোহল বেইসড লিকুইড ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণু মুক্ত করতে পারেন।
জায়নামাজ পরিষ্কার করা জরুরী
রোজার মাসে আমরা সবাই রোজা রাখার পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে থাকি। জায়নামাজে আমরা নামাজ পরি ও নামায শেষে কিছু সময় অতিবাহিত করে থাকি। যেহেতু যায়যামাজে আমরা সিজদাহ করি এবং হাটু গেড়ে বসি তাই এটা পরিষ্কার রাখা ও নিয়মিত ধোঁয়া অত্যন্ত জরুরী। নয়তো বা নানারকম জীবাণু এসে এখানে বাসা বাঁধতে পারে। মনে রাখতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ।
ঘুমানোর সময় ঠিক রাখতে হবে
অনেকেই আছেন সেহরি পর্যন্ত জেগে থাকেন। এতে করে শরীরের ক্ষতি যেমন হয় তেমনি রোজা পালন করতেও দেখা যায় নানা রকম সমস্যা। রোজার মাসে তাই আমাদের উচিত সঠিক সময়ে ঘুমানো এবং বিশ্রাম করা। শরীরের জন্য ঘুম প্রয়োজন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। এর কম পরিমাণ ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই তারাবির পর দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
ঠাণ্ডা পানি এড়িয়ে চলুন
রমজানে যতটা সম্ভব ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলুন। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান ও ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। প্রত্যেক মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা আলাদা। তাই কোন ধরনের অসুস্থতা থাকলে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আশা রাখি এই সকল রমজান মাসে সুস্থ থাকার কিছু টিপস গুলো আপনাকে সহায়তা করবে।